Advertisment

১১৬ ধরনের পদে মোট ১৬২০ জনকে নিয়োগের লক্ষ্যে সম্প্রতি তিনটি পৃথক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। প্রার্থীরা অনলাইনে আবেদনের সুযোগ পাবেন ২০ জুন পর্যন্ত। বেবিচকের পরিচিতি ও কয়েকটি পদের দায়িত্ব ও নিয়োগ প্রস্তুতি আলোচনা করা হয়েছে।

একনজরে বেবিচক

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অধীন স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) বা Civil Aviation Authority of Bangladesh (CAAB)। আকাশপথে বিমান চলাচল (এয়ার ট্রাফিকিংসহ) নিয়ন্ত্রণ, বিভিন্ন ধরনের লাইসেন্স/অনুমোদন (পাইলট/এয়ারক্রাফট/এয়ারলাইন/উঁচু দালান) কার্যক্রম এবং দেশের সব বিমানবন্দরের রক্ষণাবেক্ষণসহ সংশ্লিষ্ট অপারেশনাল অ্যাক্টিভিটিজ পরিচালনা করে বেবিচক। এ ছাড়া বিমানবন্দরে কর্মরত অন্য সব সংস্থার মধ্যে সমন্বয়ের কাজটিও এই সংস্থার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ।

বেবিচক জাতিসংঘের International Civil Aviation Organization (ICAO)-এর সদস্য এবং এর সব আন্তর্জাতিক নীতি অনুসরণ করে। 

ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং রাজশাহী, বরিশাল, যশোর, সৈয়দপুর ও কক্সবাজারের অভ্যন্তরীণ পাঁচটি বিমানবন্দরসহ মোট আটটি বিমানবন্দরে বেবিচকের কর্মকর্তাদের পদায়ন করা হয়। বেবিচকের কর্মকর্তারা জাতীয় বেতন স্কেল-২০১৫ অনুসারে বেতন ও অন্যান্য ভাতা পান। এ ছাড়া পেনশন সুবিধা, ওভারটাইম সুবিধা (কর্মচারীদের জন্য), আবাসন সুবিধা, ট্রান্সপোর্ট সুবিধাসহ (ঢাকার জন্য) সরকারি কর্মচারীদের প্রাপ্য সব সুযোগ-সুবিধা পান। বেবিচকে এরোড্রাম কর্মকর্তা/সহকারী প্রকৌশলী/সিনিয়র অফিসার/নিরাপত্তা কর্মকর্তা পদে নবম গ্রেডে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নির্দিষ্ট মেয়াদের পর সহকারী পরিচালক> উপপরিচালক>পরিচালক>নির্বাহী পরিচালক পদে পদোন্নতি পেতে পারেন। 

বেবিচকের কর্মকর্তাদের সিভিল এভিয়েশন ট্রেনিং একাডেমিতে বেসিক ট্রেনিংসহ দেশের বাইরে থেকে প্রশিক্ষণ নিতে হতে পারে। এখানে নন-অপারেশনাল ডিপার্টমেন্টের (যেমন—অ্যাডমিন, ফিন্যান্স) কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ৯টা-৫টা কাজ করতে হলেও অপারেশনাল ডিপার্টমেন্টের (যেমন—এয়ার ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট, সিকিউরিটি) দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পালাক্রমে রাত-দিন কাজ করতে হয়। এয়ার ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট সম্পর্কিত পদগুলোতে সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোর ব্যাপারে খোঁজখবর এবং পড়াশোনার মাধ্যমে সব সময় আপডেটেড থাকতে হয়।

এরোড্রাম কর্মকর্তা/এরোড্রাম সহকারঃ এয়ারপোর্ট টার্মিনাল, রানওয়ে, লাইটিং সিস্টেম, এয়ার কার্গো, প্যাসেঞ্জার পাসিংসহ বিমান চলাচলের যাবতীয় কার্যক্রম সম্পর্কিত পাবলিক ও প্রাইভেট স্থানকেই এরোড্রাম বলা হয়। এরোড্রাম ম্যানেজমেন্টের দায়িত্বপ্রাপ্ত নবম গ্রেডের কর্মকর্তাদের এরোড্রাম কর্মকর্তা এবং দশম গ্রেডের কর্মরতদের এরোড্রাম সহকারী বলা হয়। এই পদের কর্মকর্তারা সাধারণত এয়ার ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট ও এয়ারপোর্ট অপারেশনস-সংক্রান্ত কাজই বেশি করেন। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুসারে পদার্থবিজ্ঞান/গণিত বিষয়ের স্নাতক/স্নাতকোত্তর প্রার্থীরা এই পদে আবেদন করতে পারবেন। 

প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা—এই তিন ধাপে পাস করা প্রার্থীদের সাধারণত এরোড্রাম কর্মকর্তা কিংবা এরোড্রাম সহকারী পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। ১০০ নম্বরের বাছাই (প্রিলিমিনারি) পরীক্ষায় সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) নন-ক্যাডারের প্রশ্নের মতো বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং সাধারণ জ্ঞানের ওপর প্রশ্ন করা হয়।

প্রিলিমিনারি উত্তীর্ণ প্রার্থীদের ১০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হয়। এখানে সাধারণত বাংলা, ইংরেজি ও সাধারণ জ্ঞানের এককথায় প্রশ্নের ওপর মোট নম্বরের ২৫ শতাংশ এবং গণিত/পদার্থের অঙ্ক বা সংক্ষিপ্ত থিওরির ওপর বাকি ৭৫ শতাংশ নম্বর থাকতে পারে। প্রিলিমিনারির প্রস্তুতির জন্য বাজারে প্রচলিত বিসিএসের বই এবং লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য পদার্থ বা গণিত বিভাগের স্নাতক প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের পাঠ্য বই দেখা যেতে পারে। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের ১০-১৫ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়।

সিনিয়র অফিসার/নিরাপত্তা কর্মকর্তা : সিনিয়র অফিসার ও নিরাপত্তা কর্মকর্তা পদের কর্মকর্তাদের প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক—এই তিন ধাপের পরীক্ষায় পাস করতে হয়। ১০০ নম্বরের প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, সাধারণ জ্ঞান থেকে প্রশ্ন করা হয়। লিখিত পরীক্ষায় (১০০) পিএসসি নন-ক্যাডারের পরীক্ষার মতো বাংলা, ইংরেজি, গণিত ও সাধারণ জ্ঞান বিষয়ের ওপর প্রশ্ন থাকে। প্রিলিমিনারির প্রস্তুতির জন্য বাজারে প্রচলিত বিসিএসের বই এবং লিখিত পরীক্ষার পিএসসির নন-ক্যাডারের লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতিমূলক বইগুলো দেখা যেতে পারে।

লিখিত পরীক্ষায় পাস করা প্রার্থীদের ১০-১৫ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়। নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের প্রিলিমিনারি, লিখিত ও ভাইভার পাশাপাশি শারীরিক ও মেডিক্যাল পরীক্ষায়ও পাস করতে হয় এবং চাকরিতে নিয়োগ পাওয়ার পর বেসিক ট্রেনিংয়ের পাশাপাশি সিকিউরিটি ট্রেনিংও করতে হয়। এ দুই পদের কর্মকর্তারা বেবিচকের সাধারণ প্রশাসন ও নিরাপত্তা শাখার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। সিনিয়র অফিসাররা প্রশাসনিক কাজ এবং সিকিউরিটি অফিসাররা এভিয়েশন ও এয়ারক্রাফটের নিরাপত্তাসংশ্লিষ্ট (যেমন—ক্ষতিকর সামগ্রী বহন থেকে যাত্রীদের বিরত রাখা) কাজে নিয়োজিত থাকেন।

সহকারী/উপসহকারী প্রকৌশলী : সহকারী ও উপসহকারী প্রকৌশলীদের সাধারণত সিভিল, ইলেকট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল (ই-এম) এবং সিএনএস (কমিউনিকেশন, নেভিগেশন অ্যান্ড সার্ভেইল্যান্স) প্রকৌশল বিভাগের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়। রানওয়ে মেইনটেন্যান্স, লাইটিং ইকুইপমেন্ট মেইনটেন্যান্স, বোর্ডিং ব্রিজ, নিজস্ব ট্রান্সপোর্ট মেইনটেন্যান্স, সিভিল ওয়ার্কস ইত্যাদি কাজ নিজস্ব জনবলের মাধ্যমে সম্পন্ন বা তদারকি করাই প্রকৌশল বিভাগের মূল কাজ। 

সহকারী ও উপসহকারী প্রকৌশলী নিয়োগ পরীক্ষাও প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা—এই তিন ধাপে হতে পারে। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় সাধারণ বিষয়গুলো এবং লিখিত পরীক্ষায় সিভিল/ইএম/সিএনএস সম্পর্কিত টেকনিক্যাল টার্ম নিয়ে প্রশ্ন করা হতে পারে। সব শেষে মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে প্রার্থীকে যাচাই-বাছাই করা হতে পারে। সহকারী ও উপসহকারী প্রকৌশলী নিয়োগ প্রস্তুতির জন্য বিসিএসের প্রিলিমিনারি প্রস্তুতির সহায়ক বই এবং ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পর্কিত লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি সহায়ক বইগুলো দেখতে পারেন।

হিসাব সহকারী/নিরাপত্তা অপারেটর/সশস্ত্র নিরাপত্তা প্রহরী/অফিস সহায়ক : জাতীয় বেতন স্কেলের ১৪তম গ্রেডে হিসাব সহকারী এবং ২০তম গ্রেডে অফিস সহায়ক পদে নিয়োগপ্রাপ্তরা সাধারণত প্রশাসনিক কর্মচারী হিসেবে কাজ করেন। অন্যদিকে ১৪তম গ্রেডে নিরাপত্তা অপারেটর (বিভিন্ন নিরাপত্তা ইকুইপমেন্ট, যেমন—স্ক্যানিং মেশিন, মেটাল ডিটেক্টর ইত্যাদি অপারেট করার দায়িত্বে থাকেন) এবং ১৭তম গ্রেডে সশস্ত্র নিরাপত্তা প্রহরী নিরাপত্তা শাখার কর্মচারী হিসেবে কাজ করেন। 

এই পদগুলোতে লিখিত পরীক্ষার পাশাপাশি প্রিলিমিনারি পরীক্ষাও হতে পারে (আবেদনকারীর সংখ্যা খুব বেশি হলে)। এ ক্ষেত্রে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, সাধারণ জ্ঞান থেকে ১০০ নম্বরের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা এবং বাংলা, ইংরেজি, গণিত ও সাধারণ জ্ঞান থেকে এককথায় উত্তরের ১০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা হতে পারে। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের ১০-১৫ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হতে পারে। এই পদের নিয়োগ প্রস্তুতির জন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ১১ থেকে ২০তম গ্রেডের কর্মচারী নিয়োগ পরীক্ষার বিগত প্রশ্নগুলো থেকে ধারণা নেওয়া যেতে পারে। নিরাপত্তা শাখার কর্মচারীদের বেসিক ট্রেনিংয়ের পাশাপাশি সিকিউরিটি ট্রেনিংও করতে হয়।

উল্লেখযোগ্য পদ ও সংখ্যা

এরোড্রাম কর্মকর্তা (এটিএম-৩২, এটিসিও-৭), এরোড্রাম সহকারী (১২৪), সিনিয়র অফিসার (১০), নিরাপত্তা কর্মকর্তা (৫৩), সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল-৬, ই/এম-৫), উপসহকারী প্রকৌশলী (ই/এম-৩০, সিভিল-২৬), হিসাব সহকারী (৪৯), নিরাপত্তা অপারেটর (১৫২), সশস্ত্র নিরাপত্তা প্রহরী (১৯৭), অফিস সহায়ক (৭৩)।

© রবিউল আলম লুইপা

নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির লিংক : caab.teletalk.com.bd

দৈনিক কালের কন্ঠ, ৫ জুন ২০২১

নিউজ লিংকঃ https://www.kalerkantho.com/.../chakri.../2021/06/05/1039853

Post a Comment

أحدث أقدم