সূত্র: www.bdnews24.com
চীনের একটি রকেটের ধ্বংসাবশেষ নিয়ন্ত্রণহীনভাবে পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসছে। এ সপ্তাহের কোনো এক সময় সেটি পৃথিবীর বুকে আছড়ে পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তবে ঠিক কখন এবং পৃথিবীর কোন অংশে সেটি আছড়ে পড়বে বিজ্ঞানীরা সেটি এখনই বলতে পারছেন না বলে জানায় বিবিসি।
বিজ্ঞানীদের ধারণা, রকেটের ধ্বংসাবশেষ আগামী ১০ মে বা তার দুই/একদিন আগে-পরে পৃথিবীতে পড়তে পারে। আছড়ে পড়ার কেবলমাত্র ঘণ্টাখানেক আগে বিজ্ঞানীরা হয়তো সেটি ঠিক কোথায় পড়তে যাচ্ছে সেটি চিহ্নিত করতে পারবেন।
গত ২৯ এপ্রিল ‘লং মার্চ ৫বি’ নামের রকেটটি চীনের হাইনান দ্বীপ থেকে তিয়ানহে মডিউল নিয়ে পৃথিবীর কক্ষপথের উদ্দেশ্যে রওনা হয়।
তিয়ানহে মডিউল চীনের নির্মাণাধীন স্থায়ী মহাকাশ স্টেশনের খুবই গুরুত্বপূর্ণ অংশ। স্টেশনটির তিন ক্রুর বসবাসের কোয়ার্টার এই মডিউলটিতে করেই নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। মহাকাশ স্টেশন স্থাপনের জন্য কক্ষপথে মোট ১১টি মিশন পরিচালনা করবে চীন। এর প্রথমটিতেই ‘লং মার্চ ৫বি’ রকেটে করে তিয়ানহে মডিউল কক্ষপথে পাঠানো হয়।
বিবিসি জানায়, রকেটের ধ্বংসাবশেষ এখন পৃথিবী প্রদক্ষিণ করছে এবং যেকোনো সময় এটি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের নিম্নস্তরে প্রবেশ করবে।
১৯৯০ সালে বিজ্ঞনীরা ইচ্ছাকৃতভাবে ১০ টন ওজনের একটি রকেট পৃথিবীর কক্ষপথে ছেড়ে দিয়েছিলেন। যেটি পৃথিবীতে আছড়ে পড়ে।
লং মার্চ ৫বি এর ধ্বংসাবশেষের ওজন ২১ টন। এটি এখন পর্যন্ত পৃথিবীতে ধসে পড়তে যাওয়া সবচেয়ে বেশি ওজনের ধ্বংসাবশেষ হতে যাচ্ছে। ধ্বংসাবশেষটি ৯৮ ফুট লম্বা এবং ১৬ ফুট চওড়া। সেটি বর্তমানে কক্ষপথ হয়ে পৃথিবীর দিকে ঘণ্টায় প্রায় ২৭ হাজার ৬০০ কিলোমিটার গতিতে ধেয়ে আসছে।
বিবিসি সাইন্স এর জোনাথন আমোস বলেন, ধ্বংসাবশেষটি বিষুবরেখা উত্তর ও দক্ষিণে ৪১ ডিগ্রি এলাকার মধ্যে আছে। এটি উত্তরে নিউইয়র্ক, ইস্তাম্বুল ও বেইজিং এবং দক্ষিণে নিউ জিল্যান্ডের ওয়লিংটন ও চিলির উপর দিয়ে ঘুরছে।
তিনি বলেন, ‘‘রকেটের ধ্বংসাবশেষটি স্থলভাগের উপর ধসে পড়ার আশঙ্কা খুবই কম।
কারণ, পৃথিবীর ৭০ ভাগ অঞ্চল জুড়ে রয়েছে পানি। আর এমন জ্বলন্ত কিছু পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে ঢুকে পড়ার পর সেটির পানিতে পড়ার সম্ভাবনাই বেশি।”
বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, তারা রকেটের ধ্বংসাবশেষের গতিবিধির উপর নজর রাখছে। তবে ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়ে সেটিকে ভূপাতিত করার কোনো পরিকল্পনা তাদের নেই।
যু্ক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা সচিব লয়েড অস্টিন বলেন, ‘‘আমরা আশা করছি এটি এমন কোনো জায়গায় পড়বে যেখানে কারো কোনো ক্ষতি হবে না। এটি সমুদ্র বা পানিতে পড়বে বলেই আমাদের আশা।”
তবে তিনি পরোক্ষভাবে চীনের সমালোচনাও করেছেন। বলেছেন, " যেকোন পরিকল্পনা বা অভিযান পরিচালনার সময় এই ধরনের বিষয়গুলি বিবেচনায় নেয়াটা খুব জরুরি।"
এদিকে চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম পিপলস ডেইলি’র ট্যাবলয়েড গ্লোবাল টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, পশ্চিমা দেশগুলো রকেটটি ‘অনিয়ন্ত্রিত’ এবং এর কারণে ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে এমন ‘অহেতুক প্রচারণা’ চালাচ্ছে।
অ্যারোস্পেস নলেজ ম্যাগাজিনের প্রধান সম্পাদক ওয়াং ইয়ানানের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, “পরিস্থিতি মোটেই আতঙ্কিত হওয়া মতো নয়।
“রকেটের ধ্বংসাবশেষের বেশিরভাগ অংশই পৃথিবীতে পুনঃপ্রবেশের সময়ই পুড়ে যাবে; খুবই ক্ষুদ্র একটি অংশ ভূমিতে, মানুষের কার্যকলাপ থেকে অনেক দূরে কোনো এলাকায় বা সমুদ্রে পড়তে পারে।”
১৯৭৯ সালের জুলাইয়ে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার মহাকাশ স্টেশন স্কাইল্যাবের বড় একটি খণ্ড অস্ট্রেলিয়ায় আছড়ে পড়ার পর থেকে বেশিরভাগ দেশই তাদের মহাকাশযানের নকশা এমনভাবে করে যেন বড় ধরনের অনিয়ন্ত্রিত পুনঃপ্রবেশ এড়ানো যায়।
إرسال تعليق