আজকে আমরা প্রত্যয় নির্নয়ের ১০টি স্পেশাল টেকনিক নিয়ে আলোচনা করব। মুখস্থ না করে টেকনিকে উত্তর করুন। টেকনিক জানার আগে চলুন কিছু বেসিক বিষয় জেনে নিই।
প্রাতিপদিক: বিভক্তিহীন নামশব্দকে প্রাতিপদিক বলে। নামপদের যেই অংশকে আর বিশ্লেষণ করা বা ভাঙা যায় না, তাকেই প্রাতিপদিক বলে। যেমন- ‘হাত’। এই নাম শব্দের সঙ্গে কোনো বিভক্তি নেই। এর সঙ্গে ‘আ’ যুক্ত করে নতুন শব্দ ‘হাতা’ তৈরি করা যেতে পারে। এটিও একটি নাম শব্দ। আবার এর সঙ্গে ‘অল’ শব্দাংশ যুক্ত করে ‘হাতল’ আরেকটি নামশব্দ তৈরি করা যেতে পারে।
ক্রিয়ামূল বা ধাতু: ক্রিয়াপদের মূলশব্দকে বলা হয় ক্রিয়ামূল বা ধাতু। যেমন- ‘পড়্’। এটি নিজেই একটি ক্রিয়াপদ (বর্তমান কালের অনুজ্ঞায় তুচ্ছার্থক মধ্যম পুরুষের ক্রিয়ার রূপ)। আবার এর সঙ্গে বিভক্তি যুক্ত হয়ে কাল ও পুরুষভেদে ক্রিয়াটির রূপ পরিবর্তিত হতে পারে। যেমন- পড়ো, পড়ুন, পড়বে, পড়ছি, পড়ছিলাম, পড়েছি, ইত্যাদি।
বাংলা ব্যাকরণে ধাতু চিহ্নিত করার জন্য একটি আলাদা ব্যাকরণিক চিহ্ন (√) ব্যবহৃত হয়। একে বলা হয় ধাতু চিহ্ন। অর্থাৎ √পড়্ মানে ‘পড়’ ধাতু।
প্রকৃতি: শব্দমূল বা শব্দের যে অংশকে আর ভাঙা যায় না, তাকে প্রকৃতি বলে। প্রত্যয় যুক্ত প্রতিটি মৌলিক শব্দ তথা প্রত্যয় যুক্ত প্রতিটি প্রাতিপদিক ও ধাতুই একেকটি প্রকৃতি। কিন্তু মৌলিক শব্দকে প্রকৃতি বলা যায় না। যখনই সেই শব্দের সঙ্গে বা অতিরিক্ত শব্দাংশ বা প্রত্যয় যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠন করে, তখনই কেবল নতুন সৃষ্ট শব্দটির মূল শব্দটিকে প্রকৃতি বলা যায়।
অর্থাৎ, প্রত্যয় সাধিত শব্দের মূলশব্দকে বলা হয় প্রকৃতি। কিন্তু শব্দটি থেকে প্রত্যয় সরিয়ে ফেললে, মূলশব্দটিকে তখন আর প্রকৃতি বলা যাবে না।
যেমন- লাজুক, বড়াই, ঘরামি, পড়ুয়া, নাচুনে, জিতা শব্দগুলোর মূলশব্দ যথাক্রমে লাজ, বড়, ঘর, পড়, নাচ, জিত। এখানে, লাজুক, বড়াই, ঘরামি, পড়ুয়া, নাচুনে, জিতা শব্দগুলো প্রত্যয়সাধিত (মূলশব্দের সঙ্গে অতিরিক্ত শব্দাংশ বা প্রত্যয় যুক্ত হয়েছে।) আর এই শব্দগুলোর মূলশব্দ লাজ, বড়, ঘর, পড়, নাচ, জিত। অর্থাৎ লাজ, বড়, ঘর, পড়, নাচ, জিত- এগুলো লাজুক, বড়াই, ঘরামি, পড়ুয়া, নাচুনে, জিতা শব্দগুলোর প্রকৃতি। কিন্তু আলাদাভাবে উল্লেখ করলে এগুলো আর প্রকৃতি নয়, এগুলো তখন স্রেফ কতোগুলো মৌলিক শব্দ।
প্রত্যয়: মূলশব্দ বা মৌলিক শব্দের সঙ্গে যে অতিরিক্ত শব্দাংশ যুক্ত হয়ে নতুন নামপদ গঠন করে, তাকে প্রত্যয় বলে। অর্থাৎ, প্রাতিপদিক ও ধাতুর সঙ্গে যেই শব্দাংশ যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠন করে, তাদেরকেই প্রত্যয় বলে। উপরের উদাহরণে, লাজুক শব্দের প্রকৃতি ‘লাজ’-এর সঙ্গে প্রত্যয় ‘উক’ যুক্ত হয়ে গঠিত হয়েছে ‘লাজুক’ শব্দটি।
চলুন এখন জেনে নিই প্রকৃতি ও প্রত্যয় নির্ণয় করার সহজ কৌশলঃ
টেকনিক-১:
শব্দের শেষে ‘ব’ প্রত্যয় থাকলে-
[মূল শব্দ + ষ্ণ] হবে।
যেমন-
মানব=মনু+ষ্ণ—–তদ্ধিত প্রত্যয়
দানব=দনু+ষ্ণ—–তদ্ধিত প্রত্যয়
লাঘব=লঘু+ষ্ণ—–তদ্ধিত প্রত্যয়
শৈশব =শিশু +ষ্ণ—–তদ্ধিত প্রত্যয়
ইত্যাদি।
টেকনিক-২
শব্দের শেষে ‘মা’ এবং ‘ম’ প্রত্যয় থাকলে-
[মূল শব্দ + ইমন ] হবে।
যেমনঃ
নীলিমা=নীল+ইমন—-তদ্ধিত প্রত্যয় পূর্ণিমা =পূর্ণ +ইমন—-তদ্ধিত প্রত্যয়
দ্রাঘিমা =দীর্ঘ +ইমন—-তদ্ধিত প্রত্যয়
মহিমা =মহৎ +ইমন—–তদ্ধিত প্রত্যয়
ইত্যাদি।
টেকনিক-৩
শব্দের শেষে ‘ইক’ প্রত্যয় থাকলে –
[মূল শব্দ + ষ্ণিক ] হবে।
যেমনঃ
সাহিত্যিক=সাহিত্য+ষ্ণিক —-তদ্ধিত প্রত্যয়
সামাজিক =সমাজ +ষ্ণিক—-তদ্ধিত প্রত্যয়
হৈমন্তিক =হেমন্ত +ষ্ণিক—-তদ্ধিত প্রত্যয়
ধার্মিক =ধর্ম +ষ্ণিক—–তদ্ধিত প্রত্যয়
ইত্যাদি।
টেকনিক-৪
শব্দের শেষে ‘মান’প্রত্যয় থাকলে-
[মূল শব্দ +মতুপ/শানচ] হবে।
যেমনঃ
কীর্তিমান =কীর্তি+মতুপ/শানচ—-তদ্ধিত প্রত্যয়
বুদ্ধিমান =বুদ্ধি +মতুপ/শানচ—-তদ্ধিত প্রত্যয়
শ্রীমান =শ্রী+মতুপ/শানচ—-তদ্ধিত প্রত্যয়
বর্তমান=√বৃত+মতুপ/শানচ—–কৃৎপ্রত্যয়
বর্ধমান =√বৃধ+মতুপ/শানচ—-কৃৎপ্রত্যয়
ইত্যাদি।
[বিঃদ্রঃ এখানে ‘মতুপ’ ‘শানচ’ এই ২টাই দেওয়া হয়েছে।আপনারা লেখার সময় যেকোন ২টার মধ্যে যেকোন ১টি লিখবেন]
টেকনিক-৫
শব্দের শেষে ‘বান’ প্রত্যয় থাকলে-
[মূল শব্দ + বতুপ] হবে।
যেমনঃ
দয়াবান=দয়া+বতুপ—-তদ্ধিত প্রত্যয়
পূণ্যবান=পূণ্য +বতুপ—-তদ্ধিত প্রত্যয়
মেহেরবান =মেহের +বতুপ—-তদ্ধিত প্রত্যয়
মূল্যবান =মূল্য +বতুপ—–তদ্ধিত প্রত্যয়।
টেকনিক-৬
শব্দের শেষে ‘তা’ প্রত্যয় থাকলে-
[মূল শব্দ + তৃচ ] হবে।
যেমনঃ
দাতা=√দা+তৃচ—-কৃৎপ্রত্যয়
মাতা =√মা+তৃচ—-কৃৎপ্রত্যয়
বিধাতা =√বি +ধা+তৃচ—-কৃৎপ্রত্যয়
বহতা =বহ +তৃচ—–তদ্ধিত প্রত্যয়
ইত্যাদি।
টেকনিক-৭
শব্দের শেষে ‘ল’ প্রত্যয় থাকলে-
[মূল শব্দ + লচ ] হবে।
যেমনঃ
শীতল=শীত+লচ—-তদ্ধিতপ্রত্যয়
শ্যামল=শ্যান+লচ—-তদ্ধিতপ্রত্যয়
ইত্যাদি।
টেকনিক-৮
শব্দের শেষে ‘বী’ প্রত্যয় থাকলে-
[মূল শব্দ + বিন ] হবে।
যেমনঃ
মেধাবী=মেধা+বিন—-তদ্ধিতপ্রত্যয়
মায়াবী =মায়া+বিন—-তদ্ধিতপ্রত্যয়
ইত্যাদি।
টেকনিক-৯
শব্দের শেষে ‘অক’ প্রত্যয় থাকলে –
[মূল শব্দ + নক/অক ] হবে।
যেমনঃ
নায়ক =√নী+নক/অক—-কৃৎপ্রত্যয়
গায়ক=√গৈ+নক/অক—–কৃৎপ্রত্যয়
ইত্যাদি।
[বিঃদ্রঃ এখানে মূল শব্দের সাথে ‘নক’ এবং ‘অক’ এই দুইটাই দেওয়া হয়েছে। আপনারা লিখার সময় যেকোন একটি লিখবেন]
টেকনিক -১০
শব্দের শেষে ‘ই’ প্রত্যয় থাকলে-
[মূল শব্দ + ষ্ণি ]হবে।
যেমনঃ
রাবনি=রাবন+ষ্ণি
إرسال تعليق